Log In

আসাদ মন্ডলের ‘সহযোগী অধ্যাপক’ পদে নিয়োগে অনিয়মের ব্যাখ্যা চেয়েছে ইউজিসি

নিজস্ব প্রতিবেদক
রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ^বিদ্যালয় (বেরোবি) শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান মন্ডল আসাদকে লোকপ্রশাসন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক পদে অনিয়মের মাধ্যমে নিয়োগের ব্যাখ্যা চেয়ে বিশ^বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ বিশ^বিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)। গত ১৪ ডিসেম্বর ইউজিসির পাবলিক বিশ^বিদ্যালয় ম্যানেজমেন্ট বিভাগের উপ পরিচালক মোঃ গোলাম দস্তগীর স্বাক্ষরিত উক্ত চিঠি বিশ^বিদ্যালয়ে এসেছে বলে রবিবার নিশ্চিত করেছেন রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী আলমগীর চৌধুরী। লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষক আসাদুজ্জামান মন্ডলের যোগ্যতা না থাকলেও তাঁকে অনিয়মের মাধ্যমে সহযোগী অধ্যাপক এর শুন্য পদে নিয়োগ দেয়া হলে এ বিষয়ে ইউজিসিতে অভিযোগ দায়ের করায় এই ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে।
বিশ^বিদ্যালয়ের সং¯’াপন দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০২২ সালের ২৭ অক্টোবর লোকপ্রশাসন বিভাগের শুন্য পদে দুইজন সহযোগী অধ্যাপক নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছিল। বিজ্ঞপ্তিতে সহযোগী অধ্যাপক পদের আবেদনের শর্তে বলা হয়- সংশ্লিষ্ট বিষয়ে স্নাতক (সম্মান) ও অন্যুন দ্বিতীয় শ্রেণীর স্নাতকোত্তর ডিগ্রিসহ পিএইচডি এবং বিশ^বিদ্যালয় পর্যায়ে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে চার বছরসহ কমপক্ষে সাত বছরের সক্রিয় শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে অথবা বর্ণিত যোগ্যতাসহ এমফিল ডিগ্রিধারীদের ক্ষেত্রে বিশ^বিদ্যালয় পর্যায়ে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে পাঁচ বছরসহ মোট ১০ বছরের শিক্ষকতার বাস্তব অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। আবেদনের শেষ তারিখ ছিল ২২ নভেম্বর ২০২২ তারিখ।
নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি মোতাবেক লোকপ্রশাসন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপকের দুইটি শুন্য পদে চারজন প্রার্থী আবেদন করেন। যার মধ্যে তিনজনই এই বিশ^দ্যিালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক। বিজ্ঞপ্তির শর্ত অনুযায়ী উক্ত শিক্ষকদের কেউই সহযোগী অধ্যাপকের শুন্য পদে নিয়োগের শর্ত পূরণ করেন না। তবে, বেগম রোকেয়া বিশ^বিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ শিক্ষকবৃন্দের পদ আপগ্রেডেশন নীতিমালা অনুযায়ী একজনের সহযোগী অধ্যাপক পদে আবেদনের যোগ্যতা ছিল। অপর দুই শিক্ষকের মধ্যে মোঃ আসাদুজ্জামান মন্ডল আসাদ এবং সাব্বীর আহমেদ চৌধুরীর কারোরই পিএইচডি কিংবা এমফিল ডিগ্রী না থাকায় কেউই উক্ত পদের জন্য যোগ্য ছিলেন না। বিভাগীয় প্রধান আসাদ মন্ডলের সভাপতিত্বে গত ১৩ ডিসেম্বর ২০২২ তারিখে অনুষ্ঠিত প্ল্যানিং কমিটির সভায় এই অযোগ্য প্রার্থীদের নিয়োগের সুপারিশ করলে উপাচার্য প্রফেসর ড. মোঃ হাসিবুর রশীদ ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ তারিখে সহযোগী অধ্যাপক পদের বাছাই বোর্ডের তারিখ নির্ধারণ করেন। এসব অনিয়মের বিষয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলে বোর্ড ¯’গিত করতে বাধ্য হন উপাচার্য।
পরবর্তী সময়ে আবার গত ১৩ জুলাই ২০২৩ তারিখে লোকপ্রশাসন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক নিয়োগের বাছাই বোর্ড অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত নিয়োগ-বাছাই বোর্ডে অযোগ্য প্রার্থী মোঃ আসাদুজ্জামান মন্ডল আসাদকে মাত্র আট বছর এক মাসের চাকুরির অভিজ্ঞতায় সহযোগী অধ্যাপকের শুন্য পদে নিয়োগের সুপারিশ করা হয়। সুপারিশটি গত ২০ জুলাই ২০২৩ তারিখে অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেটের ৯৬তম সভায় অনুমোদনের জন্য উপ¯’াপন করা হলে প্রার্থীর চাহিত যোগ্যতা না থাকায় বাছাই বোর্ডের সুপারিশ অনুমোদন দেয় নি সিন্ডিকেট। ওই সভার সিদ্ধান্ত-০৫ মোতাবেক সুপারিশটি পুনরায় বাছাই বোর্ডে প্রেরণ করা হয়।
বেগম রোকেয়া বিশ^বিদ্যালয়, রংপুর আইন-২০০৯ এর প্রথম সংবিধি ৫(৪) ধারায় বলা হয়েছে ‘কোন বাছাই বোর্ডের সুপারিশের সহিত সিন্ডিকেট একমত না হইলে বিষয়টি উক্ত বোর্ড কর্তৃক চ্যান্সেলরের নিকট প্রেরণ করা হইবে এবং এই ব্যাপারে তাহার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলিয়া গন্য হইবে’। কিন্ত উক্ত আইন অমান্য করে উপাচার্য প্রফেসর ড. মোঃ হাসিবুর রশীদ গত ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখে পুনরায় ওই বিষয়ে বাছাই বোর্ড আহবান করেন। উপাচার্যের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উক্ত নিয়োগ-বাছাই বোর্ডের মাধ্যমে অযোগ্য প্রার্থী মোঃ আসাদুজ্জামান মন্ডল আসাদকে সহযোগী অধ্যাপকের শুন্য পদে নিয়োগের সুপারিশ করা হয় এবং ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখ অনুষ্ঠিত ৯৮তম সিন্ডিকেট সভায় তা অনুমোদন করে ঐ দিনই তড়িঘড়ি করে যোগদান করানো হয়। অভিযোগ আছে, উক্ত নিয়োগের জন্য সিন্ডিকেটের ৯৬তম সভায় অযোগ্য প্রার্থীকে সুপারিশের বিষয়ে প্রশ্ন উত্থাপনকারী সিন্ডিকেট সদস্যগণের ৯৮তম সভায় অনুপ¯ি’তির বিষয়টি নিশ্চিত হয়েই উপাচার্য মহোদয় তড়িঘড়ি করে সিন্ডিকেটের সভার আগের দিন পুনরায় বাছাই বোর্ড আহ্বান করেন এবং পরদিন সিন্ডিকেটে অনুমোদন করেন।
এদিকে আইন ভঙ্গ করে অযোগ্য প্রার্থী হিসেবে মোঃ আসাদুজ্জামান মন্ডল আসাদকে সহযোগী অধ্যাপক পদে দেয়া নিয়োগপত্রে ৯৬তম সিন্ডিকেট সভায় অনঅনুমোদনের বিষয়টিও গোপন করা হয়েছে।
অনিয়ম ও আইন ভঙ্গের মাধ্যমে নিয়োগের বিষয়ে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক তাবিউর রহমান গত ১০ অক্টোবর ২০২৩ তারিখে ইউজিসিতে অভিযোগ করলে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা তলব করে সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র চাওয়া হয়েছে বিশ^বিদ্যালয়ের কাছে। গত রোববার এসংক্রান্ত চিঠি বিশ^বিদ্যালয়ে পৌছালে সমালোচনা শুরু হয়। এছাড়া অভিযোগকারী তাবিউর রহমানকেও চিঠি দিয়ে যথাযথ মাধ্যমে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে অভিযোগ করার নির্দেশ দিয়েছে ইউজিসি।
ইউজিসির চিঠি পাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন বেগম রোকেয়া বিশ^বিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী আলমগীর চৌধুরী। তিনি জানান, পত্র অনুযায়ী যথাযথ উত্তর দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে। বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক হাসিবুর রশীদ ঢাকায় অবস্থান করায় এ বিষয়ে তাঁর বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

 

বংলার জামিন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *