নানা অভিযোগের পরও এখনো বহাল তবিয়তে গোলাম কিবরিয়া!

নিজস্ব প্রতিবেদক
ছিলেন ছাত্রদল নেতা। পরে ভোল পাল্টে হন ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগী। এতদিন সব ধরণের সুবিধা নিয়েছেন আওয়ামী লীগের হয়ে। হয়েছেন বিপুল পরিমান অর্থ-বিত্তের মালিক। বলছি, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের সময়ের সুবিধাভোগী ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সহকারী প্রকৌশলী গোলাম কিবরিয়ার কথা। আওয়ামী ফ্যাসিবাদের অন্যতম নায়ক শেখ পরিবারের সদস্য মেয়র ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপসের স্ত্রীর আত্মীয় পরিচয়ে এতোদিন ব্যাপক সুবিধা ভোগ করলেও এখন তিনি আবার ভোল পাল্টে জাতীয়তাবাদী চেতনার ধারক-বাহক সেজেছেন। তার দাপটে ও তদবিরে পুরো নগর ভবনের কর্মকর্তা কর্মচারীরা এখন অতিষ্ঠ। আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগী এই গোলাম কিবরিয়া ৫ আগস্ট স্বৈরাচার পতনের পরপরই তিনি বনে যান জাতীয়তাবাদীর ধারক-বাহক।
জাতীয়তাবাদী ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স এসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদকের পরিচয়ে তিনি এখন নগর ভবন নিয়ন্ত্রণ করছেন। ইতোমধ্যে সহকারী প্রকৌশলীদের থেকে কোন বাছাই কমিটির অনুমোদন বা ছাড়পত্রের অপেক্ষা না করে নিজে নিজেই বাজার সার্কেল মাকেট নির্মাণ সেলের নির্বাহী প্রকৌশলী পদে অধিষ্ঠিত হয়েছেন। বলা যায়, তিনি নিজেই যেন পুরো নগর ভবনেরই অধিকর্তা। তার কথায় পদোন্নতি, বদলি সব কিছু হচ্ছে। সর্বশেষ অভিযোগ উঠেছে যে গত মাসের শেষের দিকে সাবেক ছাত্রলীগের এক নেতাকে অনৈতিক লেনদেনের বিনিময়ে রাজস্ব কর্মকর্তা থেকে উপ-প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা পদে পদোন্নতি প্রদান করা হয়েছে তারই সুপারিশে। সেই রাজস্ব কর্মকর্তা সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার বিরুদ্ধে দুদককে সকল তথ্য উপাত্ত দিয়ে সহায়তা করেছে এবং নিজে দুদকের সে মামলায় সাক্ষী হয়েছিলেন।
অথচ আওয়ামী ফ্যাসিবাদের অন্যতম নায়ক শেখ পরিবারের সদস্য মেয়র ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপসের স্ত্রীর আত্মীয় পরিচয়ে এতোদিন ব্যাপক সুবিধা ভোগ করেছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রকৌশলী গোলাম কিবরিয়া। আওয়ামী লীগের আমলে যেখানে বিএনপির সাথে সামান্যতম সংশ্লিষ্ট পেলেই তাকে নানাভাবে হয়রানি এবং চাকরিচ্যুত পর্যন্ত করা হয়েছে। সেখানে তিনি ওই সময় দিব্যি দাপটের সাথে চাকরি করেছেন, প্রমোশন পেয়েছেন। আর গত ৫ আগস্ট পট পরিবর্তনের পর তিনি রাতারাতি বোল পাল্টে আবার জাতীয়তাবাদী লেবাস ধারণ করেছেন। তার এই কর্মকান্ডে প্রকৃত জাতীয়তাবাদী যারা এতোদিন সুবিধা বঞ্চিত ছিলেন তাদের মধ্যে ক্ষোভের জন্ম নিচ্ছে।
গোলাম কিবরিয়া মেয়র সাদেক হোসেন খোকার সময়ে উপ-সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে নিয়োগ প্রাপ্ত হন। সেই সময়ের নিয়োগের বিষয়টিকে এখন তিনি তার স্বার্থ হাসিলের কাজে লাগাচ্ছেন। সবাইকে বলে বেড়াচ্ছেন তিনি বিএনপির লোক। সাদেক হোসেন খোকা তাকে নিয়োগ দিয়েছেন। এছাড়াও তিনি কখনো বিএনপির নেতা মির্জা আব্বাসের নাম ভাঙাচ্ছেন। কখনো তিনি মজনুর লোক বলে পরিচয় দিচ্ছেন। তিনি সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেনের নাম ভাঙিয়েও সিটি কর্পোরেশনে দাপট দেখাচ্ছেন। বিএনপির ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক রফিকুল বকুল ও প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দীন টুকুর তিনি খুব কাছের লোক হিসেবে পরিচয় দিয়ে থাকেন। বিএনপির নেতাদের কথা বলে এবং সে সময়ের নিয়োগ প্রাপ্ত এবং ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স এসোসিয়েশনের নেতার পরিচয় দিয়ে তিনি বর্তমান প্রশাসনকে পর্যন্ত থোড়াই কেয়ার করছেন। বর্তমানে তিনি কোন নিয়ম নীতির তোয়াক্কা করছে না। ধানমন্ডি এলাকায় ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের একাধিক রেস্টুরেন্ট যেমন ডিঙ্গি, পানসি, সাম্পান এগুলো তিনি বেনামে নিয়ে পরিচালনা করছেন এমন অভিযোগ রয়েছে।
তাপসের স্ত্রীর সাথে বিশেষ সখ্যতা থাকায় অনৈতিক উপায়ে অর্থ কামিয়ে বিত্ত বৈভবের মালিক হয়েছেন তিনি। যা সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তা কর্মচারীদের কাছে ওপেন সিক্রেট বিষয়। অভিযোগ রয়েছে ঢাকায় কমপক্ষে ৮টি ফ্ল্যাটের মালিক এই কিবরিয়া। যার বেশীরভাগই তার স্ত্রীসহ বিভিন্ন আত্মীয় স্বজনের নামে কেনা। কক্সবাজারে রয়েছে একাধিক হোটল-মোটেল শেয়ার। কুয়াটাতেও রয়েছে তার দুইটি মোটেলের মালিকানা শেয়ার।
গত ৫ অক্টোবরে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সুবিধাভোগী এই প্রোকৌশলী সিটি কর্পোরেশনের কোন নিয়ম নীতিকে তোয়াক্কা করেন না তিনি। নিয়ম বর্হিভূতভাবে দায়িত্ব পালন করছেন একই সাথে তিনটি গুরুত্বপুর্ণ দপ্তরের নির্বাহী প্রোকৌশলী হিসেবে। অন্য কর্মকর্তাদের অনেকটা জিম্মি করে এই পদগুলো একাই বাগিয়ে নিয়েছেন তিনি।
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকৌশলী গোলাম কিবরিয়া বলেন, তার বিরুদ্ধে যে সব কথা বলা হচ্ছে এগুলো ষড়যন্ত্রমূলক। তিনি জাতীয়তাবাদী আদর্শের একজন সৈনিক বলেও দাবি করেন। তিনি সূত্রাপুর থানা ছাত্রদলের সভাপতি ছিলেন। আওয়ামী লীগের সময় তাকে অন্যায়ভাবে বরখাস্ত করা হয়েছিল। এরপর তিনি আইনী লড়াই করে আবার স্বপদে ফিরেছেন। তিনি বর্তমানে জাতীয়তাবাদী ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স এসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বলেও জানান। বিএনপির গন্ধ থাকলেও আওয়ামী লীগ সরকার যেখানে অন্যদের বরখাস্ত এবং নানাভাবে হয়রানি করেছে, সেখানে তিনি বিএনপির আদর্শের এতো বড় নেতা হয়েও কীভাবে এতোদিন চাকরি করলেন? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তার মতো আরো অনেকেই চাকরি করেছেন। নগর ভবনে যারা চাকরি করেন তাদের ৮০ শতাংশই বিএনপি পন্থী। তাই সবাইকে কি বাদ দেয়া সম্ভব?